#WBCS_Preparation
সিভিল সার্ভিসের প্রিপারেশন নিয়ে অনেকের মনের অনেকগুলো প্রশ্ন যেগুলো আমার কমেন্ট সেকশনে অথবা ইনবক্সে জমা হয়েছে সেসব জিনিসগুলোকে একসাথে নিয়েই কিছু কথায় আসা যাক!
প্রথমত সিভিল সার্ভিস মানে কিছু স্বপ্ন, কিছু ইচ্ছের আড়ালে আবডালে বিরাজ করে অনেকগুলো সংশয় ভয় কৌতুহল আর চিন্তার রাশ!
1.Q বাপরে! সিভিল সার্ভিস অফিসার! ও আলাদা জিনিস ভাই। ওসব আমাদের মত সাধারণের কম্মো নয়!
Ans- না! সাধারণেরই কম্মো এটা! অসাধারণরা অনেক পড়াশোনা অনেক পরিশ্রম করে কেউ ডক্টরেট করছেন, কেউ সায়েন্টিস্ট হচ্ছেন, কেউ বা অ্যাস্ট্রোনট হয়ে চাঁদে চলে যাচ্ছেন! অসাধারণদের জন্য কেবলমাত্র এই পরীক্ষার রাস্তা খোলা থাকলে শুধুমাত্র "গ্র্যাজুয়েশন পাশ" এই পরীক্ষার একমাত্র ক্রাইটেরিয়া হতো না!
2. Q ওসব পরীক্ষা পাশ করতে হলে সারাদিন পড়াশোনা করতে হয়। অত পড়াশোনা জন্মে করিনি কোনোদিন! এখন হঠাত করে করা সম্ভব নাকি!
Ans- সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং চারটে বছর আমিও পড়াশোনা করিনি। ওই পরীক্ষার দশ বারোদিন আগে সাজেশন আর টেন ইয়ার্স! যদিও পরীক্ষাটায় সফল হয়েছি বলেই আমি কোনো মাপকাঠি বা মহাপুরুষ হয়ে যাইনি। কারণ কে বলতে পারে পরের বছর আবার পরীক্ষায় বসে আমি কাটঅফ ক্লিয়ার নাও করতে পারি! তবুও একটাই কথা বলার ওই চারটে বছর ঠিক যতটা আনন্দ করেছি, আগামী দুটো বছর ঠিক ততটাই আনন্দ হুল্লোড়গুলো একটু সরিয়ে রাখলেই কেল্লাফতে!
3.Q WBCS অফিসার! ওরা জিনিয়াস! সারাজীবন ওরা স্কুলকলেজে পজিশন করে আসা ছাত্রছাত্রী! বেস্ট এভার কোয়ালিটিজ!
Ans- মাধ্যমিক 97%, অঙ্ক 100, উচ্চমাধ্যমিক 62%, অঙ্ক 41. সুতরাং সমস্ত কোয়ালিটি ওই মাধ্যমিক উচ্চমাধ্যমিক দিয়েই বিচার হয়ে যায় না! পিকচার আভি বাকি হে মেরে দোস্ত! লাস্টবেঞ্চের আস্বাদটা আজীবন নিতে পারলে ধামাকা হবেই!
4.Q ওসব পরীক্ষায় পেতে গেলে দিনে চব্বিশ ঘন্টা পড়াশোনা করতে হয়!
Ans- না! পাগল নাকি! জীবনে বন্ধুবান্ধব, চায়ের আড্ডা, উইকেন্ড পার্টি বলেও অনেক জিনিস আছে পৃথিবীতে। দিনে ছয়-সাত ঘন্টাও পড়তে পারি কিন্তু ওই সাতঘন্টা ভূমিকম্পে বাড়ি মাথায় ভেঙে পড়লেও কিছু যায় আসে না! কাঁদলেও ওই সাতটা ঘন্টা, মরলেও ওই সাতটা ঘন্টা পরেই মরবো।
5. Q অনেকজিনিস তো পড়লেও মনে থাকে না! এতকিছু মনে রাখব কি করে?
Ans- মাথাটা শুধু মুখস্থ করে গোডাউন ভরাট করার জন্য তো নয়। উপায় বের করতে হবে! যেভাবে মন চাই সেভাবে মনে রাখবো!
বইতে পড়লাম অজয় নদীর উৎপত্তিস্থল নাকি দুমকা!
ঠিক আছে! অজয় দেবগন দুম করে একটা ঘুঁষি মেরে দিয়েছে। এবার কেউ ভুলিয়ে দেখাক দেখি!
6. Q জীবন থেকে সব ত্যাগ করে ফেলতে হবে এই কয়েকটা বছর!
Ans- হ্যাঁ তা করতে হবে! তবে ফেসবুক হোয়াট্স্যাপের নেশাগুলো। কারণ মদের নেশাও কয়েকটা ঘন্টা পর কেটে যায় কিন্তু ওই বারবার টাইমলাইন চেক আর টুংটাং হোয়্যাটসঅ্যাপে মেসেজেই যত সর্বনাশ! পুরনো প্রেমটেম থেকে থাকলে ঠিকআছে! তবে নতুন করে প্রিপারেশনের সময় কোনো উপাখ্যান লিখতে যাওয়ার দরকার নেই। তাতে অন্য কারোর হয়ে গেলে সাময়িক দুঃখটুঃখ হলেও চিপস খেয়ে পরদিন সকাল থেকেই যুদ্ধ শুরু আবার!
7. Q ফেসবুকে হোয়্যাটসঅ্যাপে WBCS গ্রুপগুলো জয়েন করে অ্যাকটিভ থাকলে প্রিপারেশনটা বেশ জোরদার হয়।
Ans- ঘন্টা! ওসব গ্রুপগুলোতে প্রয়োজনাতিরিক্ত কিছু মানুষজন বসেই আছেন গ্রুপের সুন্দরীদের প্রশ্নের উত্তরগুলো চটপট দিয়ে তারপর রিকোয়েস্ট পাঠিয়ে হাইহেল্লো! নম্বরটা দাও ভালো পিডিএফ মডেল কোশ্চেন পাঠিয়ে দিচ্ছি।
আমি নিজে প্রিপারেশনের সময় থেকেই দেখেছি বিভিন্ন গ্রুপে এরকম বড় বড় বিশেষজ্ঞ মানুষজনকে। কাউকে অসম্মান না করেই বলছি তাঁদের অনেকে আজও হয়তো সেই জায়গাতেই রয়ে গেছেন বিশেষত যাঁদের কমেন্ট শুধু মেয়েদের পোস্ট করা কোশ্চেনেই সীমাবদ্ধ। এবং আমার পরিচিত গ্রুপের অনেক মেয়ে দিদি বোনদের থেকেও এইসব নেপথ্যের নায়কদের নামগুলোও জানি, তাঁরা সারাদিন পার্সোনাল মেসেজ করে করে প্রথমদিকে পড়া বোঝান, পিডিএফ পাঠান, খুব সাহায্যের লম্বা লম্বা হাত বাড়িয়ে দেন এবং শেষমেষ গুডমর্নিং গুডনাইট, লুকিং বিউটিফুল, আর ইউ সিংগল এসবে নেমে আসেন! আরে! ওই সারাদিনে পঞ্চাশটা প্রশ্ন গ্রুপে ফটাফট উত্তর দেওয়াটা খারাপ নয় কিন্তু পর পর সব কমেন্টের নোটিফিকেশন আর অন্যের কমেন্টে তর্ক করে একটা ঘন্টা কাটানোর থেকে ওই একটা ঘন্টায় Laxmikanth বা Jiban Mukherjee এর একটা করে চ্যাপটার দুবার করে ফাস্ট রিভিশন করে নেওয়া যায়। আর ওসব উত্তরগুলো চটপট দিয়ে নায়ক নাহয় ফাঁকাসময়ে ট্রেনেবাসে চলতে চলতে গান শুনতে শুনতেই হয়ে যাওয়া যায়।
8. Q রিলেশনশিপ বা ফ্যামিলির বিভিন্ন প্রবলেম সামলে মন কিকরে স্থির রাখা সম্ভব?
Ans- ওই যে! ওই সাতটা ঘন্টা! ওই সাতঘন্টা কোনো বয়ফ্রেন্ড নেই কোনো গার্লফ্রেন্ড নেই। ওই সাতটা ঘন্টা নিজের স্বপ্ন আর ইচ্ছেগুলোই আমার গার্লফ্রেন্ড, আমার বাবা আমার মা! (শারীরিক অসুস্থতা ইত্যাদি এমার্জেন্সী হলে আলাদা ব্যাপার!)
9. Q সবাই চারদিকে চাকরি পেয়ে সেটেল্ড হয়ে যাচ্ছে! এভাবে কতদিন চলবে আর! লোকজন চলতে ফিরতে জিজ্ঞাসা করছে কি করছি!
Ans - যে যা সেটেল্ড হচ্ছে হোক! শুধু সেটেল্ড তো সবাই হয়। আমি তো চমকে দেবো একদিন! ততদিন কে কি বললো জবাব "মর গে যাহ!"
10. Q মকটেস্ট কোথায় থেকে কিভাবে প্র্যাকটিস করবো?
Ans - অবশ্যই করা যায়। তবে এক্ষেত্রে আমার কনসেপ্টটা একটু আলাদা! খানিকটা ফাঁকিবাজি। মানে একটা মকটেস্ট নিয়ে ঘর বন্ধ করে বসলাম। পুরোটা তিনঘন্টা ধরে সলভ্ করলাম। তারপর একঘন্টা রেস্ট নিয়ে মেলাতে বসলাম। দুঘন্টা মেলাতে লাগলো। তারপর নিয়ে বসবো একঘন্টা যেগুলো পারিনি সেগুলো উত্তর দেখে পড়ে নিতে।
তারমানে চটপট টোটাল করে নিই। তিন + এক + দুই + এক = সাত ঘন্টা!!!
সাতঘন্টায় দুশোটা কোশ্চেন!!!
এর থেকে তো ডাইরেক্ট কোশ্চেন দেখে সলভড্ উত্তর দেখে মুখস্থ করে নিলে সাতঘন্টায় হাজারটা প্রশ্ন মুখস্থ হয়ে যাবে!
11.Q সিভিল সার্ভিস পেয়ে গেলেই ব্যাস! হেব্বি স্ট্যাটাস, নামযশ নীলবাতি, হেব্বি ডেজিগনেশন! আশেপাশে কেউ পাত্তাই পাবে না আর!
Ans- পুরোপুরি ভুল! ডেজিগনেশন স্ট্যাটাস কারোর পরিচয় নয়। আমার পরিচয় আমি মানুষটা নিজে! আর আমরা সবাই মানুষের বিচারটা শুধু দুটোমাত্র শব্দেই করি! ভালো না খারাপ! হবে না হয় নাকি! একবার ভেবে ফেললে না হয়ে যাবে কোথায়!!! ভালোলাগলেই আমার!!! অন্য কেউ সাহস করে তাকিয়ে দেখুক দেখি!!! 🤘🏻
অনীক রায় WBCS(Exe)

No comments: